আজ ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী নূর চৌধুরীকে দেখা গেল কানাডায়


অনলাইন ডেস্ক

সিবিসি টেলিভিশনের অনুসন্ধানী বিভাগ ‘দ্য ফিফথ স্টেট’-এ ‘দ্য অ্যাসাসিন নেক্সট ডোর’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী নূর চৌধুরীকে দেখা যাচ্ছে। সিবিসি টেলিভিশনের অনুসন্ধানী বিভাগ ‘দ্য ফিফথ স্টেট’-এ ‘দ্য অ্যাসাসিন নেক্সট ডোর’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী নূর চৌধুরীকে দেখা যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত খুনি নূর চৌধুরী এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন। কানাডার ওয়েস্টার্ন টরন্টোতে দেশটির এক সাংবাদিক তাঁর কাছে এ প্রশ্ন করলে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে চলে যেতে দেখা গেল বঙ্গবন্ধুর এই হত্যাকারীকে। নূর চৌধুরীকে নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করেছে কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিবিসি। ওই টেলিভিশনের অনুসন্ধানী বিভাগ ‘দ্য ফিফথ স্টেট’-এ ‘দ্য অ্যাসাসিন নেক্সট ডোর’ শিরোনামের ৪২ মিনিটের ওই প্রতিবেদন প্রচারিত হয় বাংলাদেশ সময় গতকাল শনিবার সকাল আটটায়। ওই প্রতিবেদনেই প্রথমবারের মতো আত্মগোপনে থাকা নূর চৌধুরীর দেখা পাওয়া গেল। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে কানাডায় আছেন। সেনাবাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তা কীভাবে কানাডায় এখনো বহাল তবিয়তে আছেন, তা বিশদে তুলে ধরা হয়েছে এ প্রতিবেদনে।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী নূর চৌধুরীর কানাডায় থাকার পরিপ্রেক্ষিত তুলে ধরে এ প্রতিবেদনে গুরুত্বপূর্ণ নানা ব্যক্তির সাক্ষাৎকারও তুলে ধরা হয়। তাঁদের মধ্যে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার খলিলুর রহমান, কানাডার একাধিক আইনবিশেষজ্ঞ এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্তকারী পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একাধিক কর্মকর্তা।

বঙ্গবন্ধু হত্যার দীর্ঘ সময় পর বিচার শেষে ২০১০ সালে হত্যাকারী পাঁচজনের ফাঁসি হয়। এক হত্যাকারী জিম্বাবুয়েতে মারা যান। ছয় হত্যাকারী পলাতক। তাঁরা হলেন আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, এম রশীদ চৌধুরী, নূর চৌধুরী, আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেমউদ্দিন। তাঁদের মধ্যে নূর চৌধুরী কানাডায় এবং রাশেদ চৌধুরী আছেন যুক্তরাষ্ট্রে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর নূর চৌধুরীকে ব্রাজিল ও ইরানের তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নূর চৌধুরী কানাডায় যান এবং সেখানে আশ্রয় প্রার্থনা করেন।

২০০৬ সালে কানাডার ইমিগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজি বোর্ড জানায়, নূর চৌধুরীর আবেদন অগ্রহণযোগ্য। আর সেই সঙ্গে তাঁকে কানাডা থেকে বের করে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। তবে কানাডার সুপ্রিম কোর্ট এক আদেশে বলেন, মৃত্যুদণ্ড পাওয়া কোনো ব্যক্তিকে বের করে দেওয়া তাঁদের আইনবিরুদ্ধ। খুনি নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠাতে কানাডাকে বিকল্প পথ খোঁজার অনুরোধ আইনমন্ত্রীর

সিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, নূর চৌধুরী কানাডার এ আইনের সুযোগই কাজে লাগিয়েছেন।

এর আগে নূর চৌধুরী দাবি করেছিলেন, তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত নন। তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ওই প্রতিবেদনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এটি প্রমাণিত হয়েছে যে নূর চৌধুরী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যায় সরাসরি জড়িত ছিলেন।

কানাডার সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য এ কথাও বলেছেন, ‘ব্যতিক্রমী কোনো পরিস্থিতিতে’ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকেও ফেরত পাঠানো যেতে পারে। সিবিসির প্রতিবেদনে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, নূর চৌধুরীকে কেন এই স্তরে ফেলা হচ্ছে না? কানাডার ডালহৌসি ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের অধ্যাপক রবার্ট কুরি বলেন, নূর চৌধুরীকে এই ব্যতিক্রমের আওতায় ফেলা যায়।

কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার খলিলুর রহমান বলেন, তিনি কানাডা সরকারকে একাধিকবার নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে তোলার জন্য অনুরোধ করেছেন। কিন্তু কানাডা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

সিবিসি কানাডার ইমিগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজি বোর্ডের কাছেও যায়। সেখানে নূর চৌধুরীর বর্তমান অবস্থা জানতে চায়। লিখিত বিবৃতিতে বোর্ড জানায়, কানাডার গোপনীয়তা আইনের জন্য তারা কোনো ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া এসব বিষয় নিয়ে কথা বলবে না।

প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নেন প্রতিবেদক মার্ক কেলি। তিনি জানতে চান, নূর চৌধুরীকে ফেরত আনার জন্য তাঁর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ স্থগিত করা হবে কি না? প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন কোনো ক্ষমতা তাঁর নেই। শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘হত্যাকারীদের মানবাধিকার আছে। কিন্তু আমার মানবাধিকার কোথায়?’ বিষয়টি সুরাহা করতে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কানাডার প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর